নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট | মাধ্যমিক ইতিহাস

নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট : ডিরোজিও


ভূমিকা : উনিশ শতকে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক ডিরোজিও-র (১৮০৯-৩১ খ্রি.) নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী ছাত্রমণ্ডলী যে সক্রিয় সমাজ সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলে তা ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট’ নামে পরিচিত।

[1] অনুগামী ছাত্রদল: হিন্দু কলেজের ছাত্রদরদী জনপ্রিয় অধ্যাপক ডিরোজিও-র প্রভাবে তাঁর অনুগামী ছাত্ররা লক, হিউম, টম পেইন, রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকের মতবাদ এবং ফরাসি বিপ্লবের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন। ছাত্রদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদের বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ডিরোজিও অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন
(১৮২৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

[2] আন্দোলন: ডিরোজিও-র নেতৃত্বে তাঁর অনুগামী ছাত্রদল হিন্দুধর্মের অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদপ্রথা, সতীদাহপ্রথা, মূর্তিপূজা
প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব হয়। তাঁরা নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতির পক্ষে প্রচার চালান।

[3] উগ্রতা: ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’র আন্দোলন শীঘ্রই উগ্র হয়ে ওঠে। তাঁরা নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ করে, উপবীত ছিঁড়ে, ব্রাহ্মণ
পুরোহিতদের দেখে ‘আমরা গোরুর মাংস খাই’ বলে চেঁচিয়ে, কালীঘাটের মন্দিরে মাকালীর উদ্দেশ্যে ‘গুড মর্নিং, ম্যাডাম’ বলে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

[4] পরিণাম: ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’র উগ্রতায় আতঙ্কিত অভিভাবকরা হিন্দু কলেজ থেকে তাঁদের সন্তানদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে শুরু করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এর জন্য ডিরোজিও কে দায়ী করেন এবং তাঁকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করেন। এর কিছুদিন পরেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডিরোজিও মারা যান।

[5] অনুগামীদের উদ্যোগ: ডিরোজিও-র মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামী ছাত্রদল সংস্কার আন্দোলনের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যান। এই ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন
রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, কৃম্নমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃম্ন মল্লিক, প্যারীচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

উপসংহার: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এই আন্দোলন দেশের সমাজ সংস্কৃতির উপরেও স্থায়ী প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়। গবেষক বিনয় ঘোষের মতে, তারা
প্রগতিশীলতার নামে কেবল উগ্রতা ব্যক্ত করেছিল।

The post নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল মুভমেন্ট appeared first on Rlearn Education.

Rlearn Education