বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা | দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান | বিজ্ঞানের অবদান

বাংলা রচনা : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদান | বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা |


বিজ্ঞান মানুষের প্রকৃত বন্ধু। মানুষের ছবিকে আচ্ছন্ন না করে তাকে সম্প্রসারিত করার নামই বিজ্ঞান |

ভূমিকা :

সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম পরবর্তীকালের মানুষের জন্য অন্তহীন রহস্য নিয়ে অপেক্ষা করে রয়েছে। আদিতে আদিম মানুষ বিস্ময়ে, ভয়ে, ভক্তিতে আবিষ্ট হয়ে দেখেছে এই রহস্যকে। নিজের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা, জ্ঞান দিয়ে সে চেয়েছে সেই অন্তহীন রহস্যের ভেদ করতে। সেই রহস্যের আবরণ উন্মোচন করতে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের প্রকৃত বন্ধু, প্রধান সহায় মানব- কল্যাণে বিজ্ঞানের সেই সাধনা ধারাবাহিক – ভাবে মানুষের জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধ করেছে উপকরণ বৈচিত্র্য।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :

প্রাচীন জ্ঞানবিজ্ঞান গ্যালিলিও,কেপলার, নিউটনের হাত ধরে নেমে এসে ফ্যারাডে, হেলমহোৎজের দ্বারা পরিপুষ্ট হয়ে       এ যুগের কুরি, আইনস্টাইনের বিজ্ঞানাগারে কী আশ্চর্য উন্নতি ও প্রসার লাভ করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আকাশের বিদ্যুৎকে মানুষ আজ তার ভৃত্য করেছে—ফলে বৈদ্যুতিক আলো, টেলিফোন, টেলিভিশন প্রভৃতির সৃষ্টি হয়েছে। জলস্রোত থেকে মানুষ আজ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বিজ্ঞান মানুষের প্রায় সব স্বপ্নকেই সার্থক করে তুলেছে। বিজ্ঞানের সর্বশেষ বরদান হল আণবিক শক্তি।

প্রাত্যহিক জীবন ও বিজ্ঞান :

দৈনন্দিন জীবনের প্রতি পদক্ষেপে মানুষ আজ বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। ভোরে কোয়াটর্জ ঘড়ির এ্যালার্ম শুনে ঘুম ভাঙা, ইলেকট্রিক হিটার বা গ্যাসচুল্লিতে তৈরি চা পান, মুদ্রাযন্ত্রে ছাপানো খবরের কাগজ পাঠ, ট্রাম-বাস বা ট্যাক্সিতে চড়ে অফিস যাওয়া, সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ কিংবা মাথার ওপর ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখা, কলিং বেল, ফোনের সোচ্চার আহ্বান, টাইপ রাইটারের খটাখট শব্দ, অফিসের পর বাড়িতে এসে দূরদর্শন দেখা বা রেডিও শোনা—এ সবেতেই মানুষের বিজ্ঞান নির্ভরশীলতাই প্রতিফলিত হয়।

কৃষি ও শিল্পে বিজ্ঞানের অগ্রগতি :

কৃষি ও শিল্পে বিজ্ঞানের অগ্রগতি অব্যাহত। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দান— কলের লাঙল, বীজবপনের যন্ত্র, কীটনাশক, রাসায়নিক সার, ডিপ টিউবওয়েল ইত্যাদি নিয়ে এসেছে ‘Green Revolution’ বা ‘সবুজ বিপ্লব’। শিল্পক্ষেত্রে অজস্র আবিষ্কারের মধ্যে সাম্প্রতিক হল ‘কম্পিউটার’।

চিকিৎসাক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে :

পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক্‌সের আবিষ্কার চিকিৎসা জগতে এনেছে যুগান্তর। রেডিয়াম রশ্মি, এক্স-রে, লেসার-রে আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর সংযোজন। শল্যচিকিৎসার মানও আজ সুউচ্চ।

শিক্ষাক্ষেত্র আগে ছিল কোনো মুদ্রণযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন, আজ সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন।

আরও দেখো : বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিক :

বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানবসভ্যতার বিকাশে সহায়তা করেছে, অন্যদিকে এটি বর্তমান যুগে সভ্যতার বিনাশেও সাহায্য করেছে। সেজন্য বিজ্ঞানকে বলা হয়েছে ‘Hand made of war’। কথাটি যে কিরূপ সত্য, তার প্রমাণ বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে পাওয়া গেছে। ‘হিরোশিমা’ ও ‘নাগাসাকি’তে আণবিক বোমার ধ্বংসলীলা ডেকে এনেছিল মুহূর্তের অকালমৃত্যু ও ভাবীকালের পঙ্গুত্ব। যে রাসায়নিক সার ফসল বৃদ্ধির সহায়ক, তাই করেছে জলদূষণ। যে কম্পিউটার জটিল সমস্যার সমাধানের আশীর্বাদ—তা ভারতের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহে সৃষ্টি করেছে বেকারত্ব | বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগে পৃথিবীর পরিবেশ তথা মানবসভ্যতা আজ ভয়াবহ সংকটের মুখে।

উপসংহার :

উপরিউক্ত অবস্থাসমূহের সামগ্রিক পর্যালোচনা করলে মানবসভ্যতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা সম্পর্কে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিজ্ঞানকে অপরাধী বলা চলে না। মানুষের প্রয়োজনের তাগিদেই বিজ্ঞানের আবিষ্কার, মানুষের সর্বাত্মক কল্যাণেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ ও ব্যবহারের সার্থকতা। এই সার্থকতা বিজ্ঞানধন্য, ধন্য আমাদের জীবন ‘Bad master’ নয়—বিজ্ঞান মানবসভ্যতার উন্নতির সোপান—অবনতির নয়|

মাধ্যমিক বাংলা রচনা সাজেশান | বাংলা রচনা | Madhyamik bangla Rochona Suggestion| WBBSE Bengali Rochona Suggestion| Class Ten Bangla Suggestion| Dosom srenir Bangla Rochona | Class Ten Bengali Rochona| Bigganer Obodan Rochona| Biggan O Manobsobbhota Rochona Suggestion|Madhyamik Bengali Rochona| Class Ten Bengali Rochona

Comments 1

Rlearn Education