জ্ঞানচক্ষু : আশাপূর্ণা দেবী

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান : জ্ঞানচক্ষু

■ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও : [প্রশ্নের মান 1 ]


প্রশ্ন ১। আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম রচনা কোনটি?
উত্তর : বাইরের ডাক (কবিতা)
প্রশ্ন ২। ‘বাইরের ডাক’ প্রথম কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর : শিশু সাথী।
প্রশ্ন ৩। আশাপূর্ণা দেবী কখন ‘বাইরের ডাক’ রচনা করেছিলেন?
উত্তর : ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৪। আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রকাশিত ছোটোগল্প কোনটি?
উত্তর : পত্নী ও প্রেয়সী (১৯৩৬ খ্রিঃ)।
প্রশ্ন ৫। আশাপূর্ণা দেবীর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস কোনটি?
উত্তর : প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৪৪ খ্রিঃ)।
প্রশ্ন ৬। আশাপূর্ণা দেবীর সবচেয়ে খ্যাত উপন্যাস কোন্‌টি?
উত্তর : প্রথম প্রতিশ্রুতি।
প্রশ্ন ৭। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের উৎস গ্রন্থ কোন্‌টি?
উত্তর : ‘কুমকুম’ নামক গল্প সংকলন গ্রন্থ।
প্রশ্ন ৮। “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল”—কোন্ কথাটা শুনে?
উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের নতুন মেসোমেশায়ের বই লেখার বা বই ছাপানের কথা উল্লিখিত
আছে। সেটা শুনেই তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেছে।
প্রশ্ন ৯। “তাই জানত না”—তপন কী জানত না?
উত্তর : জলজ্যান্ত একজন লেখককে খুব কাছ থেকে কখনো দেখা যায়—এই কথাটাই তপন কখনো জানত না।
প্রশ্ন ১০। “জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের”—কাকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল?
উত্তর ঃ নতুন মেসোমশায়কে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল।
প্রশ্ন ১১। তপন কী উপলক্ষ্যে তার মামার বাড়িতে এসেছে?
উত্তর : ছোটমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে।
প্রশ্ন ১২। তপনের নতুন মেসোমশায় পেশাগত দিক দিয়ে কী ছিলেন?
উত্তর : কলেজের প্রোফেসর।

প্রশ্ন ১৩। “রত্নের মূল্য জহুরির কাছে”—কথাটির সরল অর্থ কী?
উত্তর : অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছেই বস্তুর যথার্থ মূল্য নির্ধারিত হয়।
প্রশ্ন ১৪। তপন কোন্ খাতায় তার দ্বিতীয় গল্পটি লিখেছিল?
উত্তর : হোমটাস্কের খাতায়।
প্রশ্ন ১৫। তপনের ছোটোমাসি তপনের থেকে কত বছরের বড়ো ছিল?
উত্তর : বছর আষ্টেকের বড়ো।
প্রশ্ন ১৬। গল্প লেখার পর বাড়িতে তপন কী নামে পরিচিত হয়েছিল?
উত্তর : ‘কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী’।
প্রশ্ন ১৭। গল্প লেখার পর তপনকে কোন্ ঠাট্টার মুখোমুখি হতে হত?
উত্তর : “তোর হবে। হাঁ বাবা তোর হবে”—এই ঠাট্টার মুখোমুখি হতে হত তপনকে।
প্রশ্ন ১৮। তপন ঠাট্টা তামাশার মাঝেই আরও কতগুলো গল্প লিখেছিল?
উত্তর : দু-তিনটে।
প্রশ্ন ১৯। “তারপর ছুটি ফুরোল”—কোন্ ছুটির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : গরমের ছুটির কথা।
প্রশ্ন ২০। তপনের “প্রথম দিন” গল্পটি কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর : ‘সন্ধ্যাতারায়।
প্রশ্ন ২১। তপনের পুরো নামটি কী ছিল?
উত্তর : শ্রী তপন কুমার রায়।
প্রশ্ন ২২। “সারাবাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়”—শোরগোল পড়ার কারণ কী?
উত্তর : তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল বলেই তাদের সারাবাড়িতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন ২৩। তপনের ছোটোমাসি আত্মপ্রসাদের ভঙ্গিতে কী খাচ্ছিল?
উত্তর : ডিমভাজা ও চা।
প্রশ্ন ২৪। “কড়ে আঙুল দিয়ে ছোঁয়া”—কথাটির অর্থ কী?
উত্তর : বাগধারাটির সাধারণ অর্থ হল—গুরুত্বহীন চোখে দেখা বা গ্রহণ করা।
প্রশ্ন ২৫। “পায়াভারী হওয়া”—কথাটির অর্থ কী?
উত্তর : “পায়াভারী হওয়া”—কথাটির অর্থ হল অহংকারী হওয়া।
প্রশ্ন ২৬। “এর মধ্যে তপন কোথা?”—কথাটির সরলার্থ কী?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট কথাটির সরলার্থ হল—তপনের লেখা গল্পের মধ্যে তপনেরই শৈল্পিক সত্তার অনুপস্থিতি।
প্রশ্ন ২৭। তপন ছাদে উঠে শার্টের তলায় চোখ মোছে কেন?
উত্তর : তপন নিজের গল্প পড়তে গিয়ে দেখে তার লেখাকে ছোটো মেসোমশায় যৎপরো – নাস্তি পাল্টে দিয়েছেন। এই দুঃখ- অপমানে সে চোখের জল মোছে।

■ ব্যাখ্যাভিত্তিক সম্পূর্ণ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর (শব্দের সংখ্যা ৬০) [ প্রশ্নের মান -3]

প্রশ্ন ১। “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের”—একথার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামক গল্পে তপনের একসময় ধারণা ছিল যে- লেখকেরা হলেন অপরিচিত বা অজানা জীবনাচরণের মানুষ। এদিকে তার ছোটো মেসোমশায় গল্প লেখেন বা তাঁর গল্প ছাপাও হয়। অথচ তিনি তপনের বাবা, ছোটমামা বা মেজোকাকুর মতোই পরিচিত জীবনাচরণের মানুষ। তাই লেখকদের পারিবারিক,সামাজিক অবস্থান সম্বন্ধে তপনের পূর্ব ধারণা পাল্টে গিয়ে নতুন ধারণার উদয় হওয়াই হল তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়া।

প্রশ্ন ২ । “লেখক মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তপনদের মতোই মানুষ”—কথাটির নিহিতার্থ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন একসময় জানত যে, লেখকেরা আমাদের চেনা জানা জগৎ সংসারের কোনো মানুষ নন; অন্য কোনো ধরনের জীবনা – চারণের মানুষ। এদিকে তার ছোটো মেসো মশায় তো বিশেষ পরিবেশ পরিস্থিতিতে তারই সঙ্গে এক গৃহ বাতাবরণে থেকেছেন। তার ছোটো মেসোমশায় আর পাঁচজনের মতোই খাওয়াদাওয়া, গল্প করা, সিনেমা দেখতে যাওয়া—ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত। তাই, তপন অতি কাছ থেকে জলজ্যান্ত এক লেখককে দেখে সংশ্লিষ্ট অনুভূতির অধিকারী হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই”—কে, কখন এরূপ ভাবনার অধিকারী হয়েছে?

উত্তর : আশাপূর্ণ দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন এক বিশেষ পরিবেশ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ভাবনার অধিকারী হয়েছে। সে একসময় একটি গল্প লিখেছে। সেই গল্পটি তার ছোটো মাসির মাধ্যমে ছোটো মেসোমশায় তথা প্রতিষ্ঠিত লেখকের হাতে পৌঁছে গেছে। বাহ্যিক আপত্তি থাকলেও সে মনে মনে খুশিই হয়েছে। সে ভেবেছে, তার কাঁচা হাতের লেখা গল্পটি
যথার্থই গল্প হয়েছে কি না- তা এবার প্রমাণিত হবে। তার মতে,“রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।”

প্রশ্ন ৪। “তপনের হাত আছে। চোখও আছে”—বক্তা একথা বলেছেন কেন?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপনের ছোটো মেসোমশায় তপনের লেখা একটি গল্প পেয়ে তার শৈল্পিক প্রতিভার লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন। তপনের বয়সের ছেলে মেয়েরা গল্প লিখতে গেলেই রাজারানির কথা, খুন-জখম দুর্ঘটনা ও না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া মানুষকে বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয়। এদিকে, তপন তা না করে বিদ্যালয়ে তার ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেছে। এতেই, ‘মেসো’ প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

প্রশ্ন ৫। “কোথায় গল্পের সেই আঁটসাঁট ছাপার অক্ষরে গাঁথা চেহারাটি?”—এখানে তপনের কোন্ আকাঙ্ক্ষা আভাসিত হয়েছে ?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রথম একটি গল্প লিখেছে। তার নতুন মেসোমশায় ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় সেই গল্পটিকে ছাপিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই, তপন ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার পাতায় নিজের গল্পের ছাপানো রূপটিকে দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বলাবাহুল্য, তপন কেন, পৃথিবীর যে কোনো ব্যক্তি তার প্রথম লেখাকে ছাপার অক্ষরে দেখতে ইচ্ছুক হয়।

প্রশ্ন ৬। “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে”—একথা বলা হয়েছে কেন?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপন তার জীবনে প্রথম গল্প লিখেছে। তার নতুন মেসোমশায় সেই গল্পটিকে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য নিয়ে গেছেন। সময়ের ব্যবধানে তার নতুন মেসোমশায় ও ছোটমাসি সেই পত্রিকার একটি সংস্করণ হাতে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছেন। তখনই, তপন গল্পটির প্রকাশিত হওয়া এবং হাজার হাজার ছেলের কাছে ঘুরতে থাকার বিষয়টি ভেবে অভূতপূর্ব রোমাঞ্চ ও বিস্ময়ে প্রভাবিত হয়েছে। তাই, তার মনে সংশ্লিষ্ট ভাবনাটি দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন ৭। “সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না”—তপন সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না কেন?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন তার গল্প প্রকাশিত হওয়ার মূলে গল্পের সাফল্যের পরিবর্তে নতুন মেসোমশায়- এর মহত্ত্বের কথা শুনেছে। প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হলে যে আনন্দ হয়—সে আনন্দ তার চলে গেছে। আসলে, কথাবার্তায় তপনের গল্পের চেয়ে তপনের মেসোমশায়ের করুণা করার দিক প্রাধান্য পেয়েছে। তপনের যথার্থ শিল্পীসত্তা তাতে আহত হয়েছে বলেই গল্পের প্রকাশের আনন্দ সে আর খুঁজে পায় না।

প্রশ্ন ৮। “এর মধ্যে তপন কোথা?”—“তপন কোথা?” অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে “তপন কোথা?”—– কথাটির সরল অর্থ হল, তপনের শিল্পীসত্তা অনুপস্থিত।
তপনের নতুন মেসোমশায় তপনের গল্পটিকে আগাগোড়া সংশোধন করে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশ করিয়েছেন। পরিবর্তিত পরিবেশে তপন সেই গল্পটি পড়তে গিয়ে গল্পের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিজের শিল্পীসত্তার অপমান অনুভব করেছে। তপনের শৈল্পিক সত্তার সেই অনুপস্থিতিকেই বলা হয়েছে—“তপন কোথা?”

প্রশ্ন ৯। “লেখক মেসো তপনের গল্পটি ছাপিয়ে দিয়েছে”—এখানে কী বলতে চাওয়া হয়েছে?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের প্রথম লেখা গল্পটিকে তপনেরই ‘লেখক মেসোমশায়’ আগাগোড়া সংশোধন করেছেন এবং ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশ করিয়েছেন। এটাই হল ‘লেখক মেসো’ কর্তৃক গল্প ছাপিয়ে দেওয়া | এতে গল্পের শৈল্পিক সাফল্যের পরিবর্তে তপনের মেসোর কীর্তির পরিচয় বেশি ফুটে উঠেছে। বলাবাহুল্য, তাতে তপনের লেখক-সত্তায় অপমান আভাসিত হয়েছে।

■ বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন : (শব্দ সংখ্যা-২০০) [ প্রশ্নের মান—৭ ]

প্রশ্ন ১। ‘তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার চেয়ে অপমানের’—কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে? অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :

আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম গল্প – সংকলন’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামক গল্প থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে। সেই গল্পের তপন-এর প্রথম লেখা রচনাটিকে (গল্পটিকে) তার নতুন মেসোমশায় ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়েছেন। বাড়ির অন্যান্য মানুষের কাছে সেটি পড়তে গিয়ে তপন নিজের লেখা লাইন খুঁজে পায়নি। সেই অবস্থার তার মনের অনুভূতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উল্লিখিত হয়েছে।

আশাপূর্ণা দেবী তাঁর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনকে বিকাশ ও প্রকাশের স্তরে থাকা প্রকৃত লেখক হিসেবে দেখিয়েছেন। প্রকৃত লেখকেরা তাদের লেখার সম্মানেই গর্বিত হতে চায়। তপন তার প্রথম লেখার মধ্য দিয়ে সেই সম্মানের পরিবর্তে অবমাননার মুখোমুখি হয়েছিল।

তার লেখা প্রথম গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তার নতুন মেসোমশায়- এর সংশোধনের দিকটিকে স্পষ্টভাবে অনুভব করে। সে বুঝতে পারে যে, তার মেসোমশায় তার ছাপানোর জন্য যৎপরোনাস্তি সংশোধন করেছেন। এতে তপনের শিল্পীসত্তা আহত হয়। তার মনে হয় যে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে মিথ্যা সাফল্যের চেয়ে বিফলতা অনেক বেশি ভাল। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরবর্তীক্ষেত্রে সে নিজে গিয়ে গল্প ছাপতে দেবে। তাতে গল্প প্রকাশিত না হলে বিফলতার সান্ত্বনা থাকবে; মিথ্যা সাফল্যের অপমান থাকবে না। কেউ করুণা করে তার গল্প ছাপিয়েছে—এটা তাকে শুনতে হবে না। অথবা, নিজের লেখা পড়তে গিয়ে তাকে অভিনয়করে অপরের মূলে যে তার শিল্পীসত্তার আহত হওয়ার দিকটি কাজ করেছে—তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রশ্ন ২। “জ্ঞানচক্ষু” গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম গল্প- সংকলন’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি নামকরণের বিচারে হয়ে ব্যঞ্জনাধর্মী ও সফল হয়ে উঠেছে। ‘জ্ঞানচক্ষু’ শব্দটির অর্থই হল ‘জ্ঞান রূপ চক্ষু’ তথা ‘অন্তর্নিহিত বোধ’। গল্পের কাহিনিতে একাধিক প্রসঙ্গে তপনের সেই জ্ঞানচক্ষু খুলে গেছে। আর সেই ভাবনাটিই গল্পের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছে বলেই গল্পের নামকরণ সার্থক, সংগত ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।

‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের তপন তার ভাবনার প্রথম স্তরে লেখকদের চেনাজানা জগতের মানুষ বলে বিবেচনা করেনি। এমনকি লেখককে খুব কাছে থেকে দেখা যায়—সেটাই সে জানত না। মামার বাড়িতে এসে ‘লেখক মেসো’-কে দেখে লেখকের সামাজিক, পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে আগের বোধ পাল্টে যায়; নতুন বোধের উদয় হয়, সে বুঝতে পারে, লেখকেরা আর পাঁচজনের মতোই ঘরোয়া মানুষ। এই ঘটনাতে প্রথম তার জ্ঞানচক্ষু খুলেছে। এই বোধের পরেই সে নিজেই গল্প লিখতে শুরু করেছে। তার মনে হয়েছে, লেখকেরা আকাশ থেকে পড়া জীব নয় বলে নিজের লেখক হতে বাধা কী? এখানে লেখক হওয়ার বিষয়ে তার ‘জ্ঞানচক্ষু উদয়’ হয়েছে। গল্পের শেষে বাড়ির উপস্থিত মানুষজনের কাছে নিজের ছাপানো গল্প পড়তে গিয়ে সে দেখেছে যে, তার লেখা আগাগোড়া সংশোধিত হয়েছে। এতে তার লেখক-সত্তা আহত হয়েছে এবং ঘটনাটিকে দারুণ অপমানের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাতে তার মনে হয়েছে যে, শিল্পের সাফল্যেই শিল্পীর সাফল্য; অপরের করুণাময় সৃষ্ট মিথ্যা গর্ব শিল্পীকে আহত করে। এতেও তার জ্ঞানচক্ষু খুলেছে।

এইভাবে, পাঠ্যগল্পের কাহিনির সূচনা,অগ্রগতি ও পরিণতিদানে জ্ঞানচক্ষু খুলে যাওয়ার বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়েছে। তাই, গল্পের নামকরণ হয়েছে খুবই ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক।

প্রশ্ন ৩। “জ্ঞানচক্ষু” গল্প অবলম্বনে শিল্প সম্বন্ধে লেখিকার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর সাহিত্য চিন্তাকেন্দ্রিক এক অনন্য সাধারণ গল্প হল ‘জ্ঞানচক্ষু’। গল্পটিতে তপন নামে এক বালকের ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতির প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত লেখকের মানসিকতার দিকটি পরিস্ফুট হয়েছে। প্রকৃত লেখক যে তাঁর লেখার সম্মানেই গর্বিত হতে চায়; অন্যকিছুতে নয়—সেটাই এ গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বলাবাহুল্য, লেখিকা সাহিত্য সম্বন্ধে তাঁর সেই নিজস্ব বোধটিকেই এই গল্পে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন হল বিদ্যালয়স্তরের এক ছাত্র। একসময় সে ভাবত যে, লেখকরা চেনাজানা জগতের বাইরে অন্য কোনো পরিবেশের মানুষ, পরে মামাবাড়িতে এসে লেখক মেসোমশায়কে দেখে তার সেই বোধ পাল্টে যায়। সে কাছে থাকা নতুন মেসো মশায়কে দেখে বিশ্বাস করে যে, লেখকেরা আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়। এরপর সে নিজেই গল্প লেখা শুরু করে। তার নতুন মেসোমশায় শ্বশুর বাড়িতে সৌহার্দ্য ও সৌজন্য প্রতিষ্ঠার জন্য তার লেখা গল্পটিকে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন।

বলাবাহুল্য, তিনি গল্পটিকে আগাগোড়া সংশোধন করেই ছাপিয়েছিলেন। তপন উপস্থিত মানুষজনের কাছে তা পড়তে গিয়ে বিষয়টি বুঝতে পারে। সে দেখে যে, তার গল্পের মধ্যে তারই লেখা লাইন নেই। এতে সে দারুণভাবে দুঃখিত হয় এবং অপমানিতও হয়। পরবর্তীক্ষেত্রে, সে নিজে গিয়ে ছাপানোর জন্য, গল্প দেওয়ার কথা ভাবে।
এইভাবে তপনের আচার-আচরণে দেখা যায় যে, তপন নতুন লেখক হিসেবে উৎসাহের সঙ্গে নিজের ছাপা লেখা দেখতে চেয়েছে। আবার, নিজের লেখার মধ্যে নিজেরই শৈল্পিক সত্তার অনস্তিত্ব দেখে দুঃখিত ও অপমানিত হয়েছে।
সুতরাং, একজন ছেলের লেখক হয়ে ওঠার কাহিনিতে প্রকৃত লেখকের স্বভাব-চরিত্র তথা সম্মানের দিকটি গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে।

প্রশ্ন ৪। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপনের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা, তপনকে কেন্দ্র করে নতুন লেখকের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনার প্রকাশ কীভাবে ঘটেছে, তা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম’ গল্প- সংকলন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্রটিই হল বিদ্যালয়স্তরের এক ছাত্র তপন। সে গরমের ছুটি উপলক্ষ্যে তার মামাবাড়িতে এসেছে, নতুন মেসোমশায়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে এবং নতুন মেসোমশায়কে লেখক হিসেবে চিনেছে। তাতে উৎসাহিত হয়ে সে নিজে গল্প লিখেছে।
মেসোমশায়ের সৌজন্যে গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হবে—এটা জেনে সে দারুণভাবে আনন্দিত হয়েছে। একসময় সে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় নিজের গল্পটিকে ছাপার আকারে দেখেছে। অবশ্য, পড়ার সময় সে বুঝতে পেরেছে যে, তার মেসোমশায় গল্পটির আগাগোড়া সংশোধন করেছেন। এতে সে দারুণভাবে দুঃখিত ও অপমানিত হয়েছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পরবর্তীক্ষেত্রে সে নিজে গিয়ে গল্প ছাপতে দেবে। তার এই কার্য- পরম্পরা থেকে তার চরিত্রের কতকগুলি দিককে তুলে ধরা যেতে পারে |

লেখক সম্বন্ধে পূর্ববর্তী বোধ : তপন তার মামাবাড়িতে লেখক মেসোমশায়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে ভাবত যে, লেখকেরা হল আকাশ থেকে পড়া জীব। তাঁদেরকে বাস্তবে দেখা যায় না।

লেখক সম্বন্ধে পরবর্তী বোধ : মামাবাড়িতে নতুন মেসোমশায়ের খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো,পোশাক-পরিচ্ছেদ, আনন্দ-উপকরণ ইত্যাদি দেখে তপন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লেখকরা আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তাদেরই মতো মানুষ |
নতুন লেখকের আশা-আকাঙ্ক্ষা : লেখকেরা চেনাজানা জীবনচরণের মানুষ জেনে নিয়ে তপন নিজেই উৎসাহিত হয়ে গল্প লিখেছে। লেখক মেসোমশায়ের কাছে গল্পের প্রশংসা পেয়ে আনন্দিত হয়েছে এবং মেসোমশারের সাহায্যে গল্পের প্রকাশ ঘটবে জেনে গভীর উৎসাহে ফুটেছে। অবশ্য, গল্পের মহত্ত্বের চেয়ে মেসোমশায়ের মহত্ত্বে তার
আনন্দ কমেছে।
প্রকৃত লেখকের বোধ ও আত্মযন্ত্রণা : তপন ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত নিজের গল্পটি পড়তে গিয়ে দেখে যে, গল্পের আগাগোড়া পরিবর্তনে তার শিল্পীসত্তা অস্বীকৃত হয়েছে। প্রকৃত শিল্পীর বোধে তার মন দুঃখিত ও অপমানিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৫। “তাঁর চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার চেয়ে অপমানের”—কার চেয়ে দুঃখের অপমানের কথা বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : প্রশ্নোদ্ধৃত তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটি আশাপূর্ণা দেবীর লেখা আমাদের পাঠ্য ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি থেকে গৃহীত হয়েছে।

নতুন মেসোকে দেখে লেখক সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর হতে না হতেই তপন একখানি গল্প লিখে ফেলে। ছোটোমেসোর সুপারিশে তা ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপাও হয়। তারপর পত্রিকা হাতে যখন সে তার নিজের লেখা গল্প পড়তে যায়, তখন সে দেখে তার মেসো গল্পটি আগাগোড়াই কারেকশন করেছেন অর্থাৎ নতুন করে লিখেছেন—‘নিজের পাকা হাতের কলমে।’ নিজের নামে অন্যের লেখা গল্প পড়ার এই বঞ্চনাকেই, দুঃখের, অপমানের ঘটনাকেই বলা হয়েছে।

উক্ত গল্পে লেখিকা তপন নামের একজন কিশোরের গল্প লেখার উচ্ছ্বসিত বাসনা এবং পরিণামে তার মোহভঙ্গের কাহিনী গ্রহণ করেছেন। লেখকরা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই—এই ভাবনা থেকেই গল্প লেখার ঝোঁক তপনকে পেয়ে বসে। এবং তপন একটা গল্প লেখে। ছোটোমাসির বদান্যতায় ও নতুন মেসোর অনুকম্পায় গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হয়। সন্ধ্যাতারা’র সেই বহু প্রতীক্ষিত সংখ্যাটি হাতে তপন সেই দিনটিকে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন মনে করতে শুরু করে। তারপর হঠাৎ নতুন মেসোই তাঁর ‘কারেকশনে’র কথাটা পাঁচকান করে। দিলে তপনের কৃতিত্বের আলোচনা ক্রমশ মেসো মশাইয়ের হস্তক্ষেপের আলোচনায় পরিণত হয়। অবশেষে তপনযখন সমস্ত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ উপেক্ষা করে গল্পটি পড়তে যায় তখন গল্পের একটা লাইনেও সে নিজেকে খুঁজে পায় না। নিজের নামে অন্যের গল্প পড়ার বিড়ম্বনা তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয়। তার কোমল ভাবাবেগ অপ্রত্যাশিত আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে পরিণতি লাভ করে। তাই ঘটনাটিকে তপনের দুঃখের অপমানের মনে হয়েছে।

One thought on “জ্ঞানচক্ষু : আশাপূর্ণা দেবী

Comments are closed.

Rlearn Education