মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন : বহুরূপী
■ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও :[ প্রশ্নের মান – ১]
প্রশ্ন ১। সুবোধ ঘোষের প্রথম প্রকাশিত গল্প কী কী?
উত্তর : ‘অযান্ত্রিক’ (প্রথম), ‘ফসিল’ (১৯৪০)।
প্রশ্ন ২। পাঠ্যগল্পটির উৎসগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘গল্প সমগ্র’।
প্রশ্ন ৩। জগদীশবাবুর বাড়িতে কতদিন আগে এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন?
উত্তর : সাতদিন।
প্রশ্ন ৪। সেই সন্ন্যাসীর বয়স কত?
উত্তর : অনেকের অনুমান, হাজার বছরেরও বেশি।
প্রশ্ন ৫। হরিদা কার কাছ থেকে বৈরাগী সাজার প্রেরণা পেয়েছিলেন?
উত্তর : জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর জীবনাচরণ থেকে।
প্রশ্ন ৬। জগদীশবাবু বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীটিকে কত টাকা দিয়েছিলেন?
উত্তর : একশো টাকার একটা নোট।
প্রশ্ন ৭। হরিদার ঘরটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : শহরের সবচেয়ে সরু এক গলির ভিতরে।
প্রশ্ন ৮। “আর আমাদের চারজনের সকাল- সন্ধ্যার আড্ডার”—চারজন কে কে?
উত্তর : অনাদি, ভবতোষ, হরি ও গল্পের কথক।
প্রশ্ন ৯। হরিদার বাড়িতে চায়ের প্রস্তুতিতে হরিদার ভূমিকা ছিল?
উত্তর : উনুনে আগুনের আঁচে জল ফুটিয়ে দেওয়া।
প্রশ্ন ১০। হরিদা আপিসের কাজ বা দোকানে বিক্রিওয়ালার কাজ করেনি কেন?
উত্তর : একেবারে ঘড়ির কাঁটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে আর একটা নিয়ম বেঁধে দিয়ে রোজ একটা চাকরির কাজ করে খাওয়া হরিদার পছন্দ নয় অর্থাৎ, একঘেয়ে কাজ করতে হরিদার আপত্তি ছিল।
প্রশ্ন ১১। হরিদার জীবনের পেশা কী ছিল?
উত্তর : বহুরূপী সেজে নাটকীয় বৈচিত্র্য দেখানো।
প্রশ্ন ১২। “যারা চিনতে পারে —”—তারা কী দেয় ?
উত্তর : এক আনা দু-আনা বখশিশ দেয়।
প্রশ্ন ১৩। “যারা চিনতে পারে না…..”—তারা কী দেয় ?
উত্তর : তারা হয় কিছুই দেয় না, নতুবা বিরক্ত হয়ে দুটো-একটা পয়সা দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন ১৪। উন্মাদ-পাগলের অভিনয় কোথায় হয়েছিল?
উত্তর : চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে।
প্রশ্ন ১৫। উন্মাদ-পাগলকে হরিদা বলে প্রথম কে চিনেছিল?
উত্তর : বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ।
প্রশ্ন ১৬। “হঠাৎ পথের উপর দিয়ে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ…”—ঘুঙুর কী?
উত্তর : মেয়েদের পায়ে পরার একধরনের অলঙ্কার।
প্রশ্ন ১৭। পাঠ্যাংশ অনুযায়ী হরিদা কী কী সেজেছিল?
উত্তর : উন্মাদ, বাইজি, বাউল, কাপালিক, কাবুলিওয়ালা, কেরামিন সাহেব, পুলিশ, বিরাগী।
প্রশ্ন ১৮। পুলিশ সেজে হরিদা বিদ্যালয়ের ক-টি ছেলেকে ধরেছিল?
উত্তর : লিচুবাগানের ভেতরে ঢোকা চারটি ছেলেকে।
প্রশ্ন ১৯। পুলিশ সেজে হরিদা কত ঘুষ নিয়েছিল?
উত্তর : আট আনা।
প্রশ্ন ২০। হরিদা কার কাছ থেকে আট আনা ঘুষ নিয়েছিলেন?
উত্তর : স্কুলের মাস্টারমশাই-এর কাছ থেকে।
প্রশ্ন ২১। ‘জবর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘জবর’ শব্দের সাধারণ অর্থ ‘প্রচুর’ হলেও পাঠ্যে-এ তার অর্থ ‘দারুণ’।
প্রশ্ন ২২। হরিদা কখন জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে গিয়েছিল?
উত্তর : জ্যোৎস্নালোকিত এক সন্ধ্যায়।
প্রশ্ন ২৩। হরিদা সবচেয়ে বেশি রোজগার করেছিল কী সেজে?
উত্তর : বাইজি সেজে।
প্রশ্ন ২৪। বহুরূপী সেজে হরিদার রোজগার কেমন হত?
উত্তর : পুরো দিনটা ঘুরে দু-তিন টাকার বেশি হত না।
প্রশ্ন ২৫। হরিদা সপ্তাহে কতদিন বহুরূপী সাজত?
উত্তর : বড়োজোর একদিন।
প্রশ্ন ২৬। “এবার মারি তো হাতি, লুটি তো ভাণ্ডার” কথাটির সরল অর্থ কী?
উত্তর : বড়ো ধরনের প্রাপ্তির আশা।
প্রশ্ন ২৭। জগদীশবাবু খুশি হয়ে হরিদাকে সর্বোচ্চ কত বখশিশ দিতে পারতেন?
উত্তর : পাঁচ আনা।
প্রশ্ন ২৮। ভবতোষ, অনাদি প্রমুখ জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ধ্যায় কী জন্য গিয়েছিল?
উত্তর : খেলাধুলার চাঁদা তুলতে।
প্রশ্ন ২৯। “সাদা মাথা, সাদা দাড়ি, সৌম্য, শান্ত ও জ্ঞানী মানুষ”—মানুষটি কে?
উত্তর : জগদীশবাবু।
প্রশ্ন ৩০। “হাতে কমণ্ডলু নেই”—কমণ্ডলু কী?
উত্তর : সন্ন্যাসীদের জলপাত্রকে বলা হয় কমণ্ডলু।
প্রশ্ন ৩১। মৃগচর্মের আসন কী?
উত্তর : অজিন।প্রশ্ন ৩২। হরিদার কাছে কী বই ছিল?
উত্তর : গীতা।
প্রশ্ন ৩৩। “আপনি কী ভগবানের চেয়েও বড়ো”—একথা বলার কারণ কী?
উত্তর : বহুরূপীর মতে, জগদীশবাবু অর্থের অহংকারে ওপরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন বলেই সংশ্লিষ্ট প্রশ্নটি এসেছে।
প্রশ্ন ৩৪। ‘পরম সুখ’ কী?
উত্তর : সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া।
প্রশ্ন ৩৫। ‘ধন-জন-যৌবন কিছুই নয় জগদীশবাবু’—বহুরূপীর মতে সেগুলি কী?
উত্তর : সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা।
প্রশ্ন ৩৬। জগদীশবাবু বহুরূপীকে প্রণামী হিসেবে কত টাকা দিতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : একশো এক টাকা।
প্রশ্ন ৩৭। উত্তরীয় কী?
উত্তর : সন্ন্যাসী বা ওই ধরণের ব্যক্তিদের শরীরের উপরাংশে ব্যবহৃত বস্ত্রকে বলা হয় উত্তরীয়।
প্রশ্ন ৩৮। “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়”—‘ঢং’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : অঙ্গভঙ্গি।
প্রশ্ন ৩৯। বখশিশ কী?
উত্তর : খুশি হয়ে দেওয়া অর্থকে বলা হয় বখশিস বা পারিতোষিক।
আরও দেখো : জ্ঞানচক্ষু-আশাপূর্ণা দেবী
■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও : [ প্রশ্নের মান -3]
প্রশ্ন ১। “শুনেছেন হরিদা কী কাণ্ড হয়েছে”—কাণ্ডটি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর : সুবোধ ঘোষের “বহুরূপী” গল্পে দেখা যায় যে, ‘সাতদিন হলো’ এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। খুব উঁচু দরের সেই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন এবং সারাবছরে একটি হরিতকী ছাড়া কিছুই খেতেন না। অনেকের মতে, সেই সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরেরও বেশি। তিনি জগদীশ – বাবুকে ছাড়া অপর কোনো ব্যক্তিকে পায়ের ধুলো দেননি। তাও শুধু কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরা হয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছিল। জগদীশবাবু একশো টাকার একটি নোট তাকে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২। “সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন”—এরূপ হাসির কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু একসময় ‘খুব উঁচুদরের’ এক সন্ন্যাসীকে ডেকে প্রণাম করে একশো টাকার একটা নোট দিয়েছিলেন। আর, তারপর সন্ন্যাসীটি হেসেছেন এবং চলে গেছেন। সন্ন্যাসীর আচরণেই ছিল এক অভূতপূর্ব বাহ্যিক ভণ্ডামি, তাই তিনি হাসির মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে অর্থের অপ্রয়োজনীয়তার দিকটিকে ব্যক্ত করতে চেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩। “হরিদার উনুনের হাঁড়িতে অনেকসময় শুধু জল ফোটে ভাত ফোটে না”—একথা বলার কারণ কী?
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের হরিদা হলেন খুবই গরীব মানুষ। একেবারে ঘড়ির কাঁটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে নিয়ম করে রোজ কাজে যাওয়াটা তাঁর পছন্দ নয় বলেই, তিনি অফিসের কাজ বা দোকানে বিক্রিওয়ালার কাজের চেষ্টা করেননি। সপ্তাহে একটা দিন তথা মাঝে মাঝে তিনি বহুরূপী সেজে কিছু রোজগার করলেও তাতে পেট
চলে না। তাই অভাবের কারণেই উনুনের হাঁড়িতে শুধু অনেকসময় জল ফোটে; ভাত ফোটে না।
প্রশ্ন ৪। “একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল”—আতঙ্কের কারণ কী?
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের হরিদা একদিন ‘উন্মাদ-পাগলের’ রূপে সেজে ঠিক দুপুরবেলাতে চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে হাজির হয়েছিলেন। তারপর একটা থান ইট হাতে তুলে নিয়ে বাসের ওপরে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন তাতে বাসটির যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে হল্লা করছিল। তাই, চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঠিক দুপুর বেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল।
প্রশ্ন ৫। “একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধমক দেন”—এইভাবে কাশীনাথ ধমক দিয়েছে কেন?
উত্তর :সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একদিন পাগল সেজে বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন। সে অবস্থায় তিনি একটা থান ইট হাতে তুলে যাত্রীদের তাড়া করছিলেন। কাশীনাথ বিষয়টি বুঝতে পারে। তখনই তাঁকে তিনি ধমক দেন। তাঁর মনে হয়েছিল যে, বাসযাত্রীদের মধ্যে ইটের আঘাতের আতঙ্ক সৃষ্টি করা ভালো দেখাচ্ছে না; অনেকে আবার বিরক্তও হচ্ছে। তাই কাশীনাথ ধমক দেন।
প্রশ্ন ৬। “দোকানদার হেসে ফেলে”—হেসে ফেলার কারণ কী?
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে দোকানদার বাইজির বেশে আসা হরিদাকে দেখে হেসে ফেলেছে। সন্ধ্যার আলো সবেমাত্র জ্বলেছে এবং শহরের দোকানে দোকানে লোকেদের ব্যস্ততা ও মুখরতা জমে উঠেছে। সেই সময় হরিদা বাইজীলা বেশে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ ঝুমঝুম করে বাজিয়ে চলে যান। শহরে নবাগতরা তাতে বিস্মিত হলেও দোকানদার হেসে ফেলে।
প্রশ্ন ৭। জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর বেশে আগত হরিদার সাজসজ্জার বিবরণ দাও।
উত্তর : সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একসময় এক যোগী সন্ন্যাসী অথবা বিরাগী সেজেছেন এবং জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হয়েছেন। তিনি জটাজুটধারী সন্ন্যাসীর বেশে আসেননি। তাঁর কমণ্ডলু নেই, চিমটে নেই; মৃগচর্মের আসন বা গৈরিক সাজও নেই। তাঁর আছড় গা, সাদা উত্তরীয় এবং পরণে ছোটো বহরের একটি সাদা ‘থান’। তাঁর মাথায় ফুরফুর করে শুকনো সাদা চুল উড়ছে। তাঁর পা ধুলোমাখা হাতে একটা ঝোলা এবং সেই ঝোলার ভিতরে একটি বই আছে, সেটি হল গীতা। এক উদাত্ত শান্ত উজ্জ্বল দৃষ্টি নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন।
প্রশ্ন ৮। “নইলে আমি শান্তি পাব না”—এই সূত্রে ধনসম্পদ সম্বন্ধে বিরাগীর বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর : সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বহুরূপীর বেশে এক সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে এসেছেন।
জগদীশবাবুর সঙ্গে কথাসূত্রে তিনি সব গ্রহণ সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য বাণী বর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ধন-জন-যৌবন কিছুই নয়; ওসব হল সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা, সুতরাং, সেই বঞ্চনা থেকে নিজেকে দূরে রেখে মনে প্রাণে ঈশ্বরকে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবেই সব সম্পদ পাওয়া হয়ে যাবে।
প্রশ্ন ৯। “তাতে যে আমার ঢঙ নষ্ট হয়ে যায়” — একথা বলার কারণ কী?
উত্তর: সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে একসময় অনাদি জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদার টাকা না নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে হরিদা প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করছেন। ‘ঢঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া’ কথাটির সরল অর্থ হল ‘অঙ্গভঙ্গি বিকৃত হওয়া’। আসলে, হরিদা বলতে চেয়েছেন যে, বিরাগীর বেশে এসে টাকা নেওয়াটা বৈরাগীর স্বাভাবিক স্বভাব-বৈশিষ্ট্যকে আঘাত করে। তাতে বহুরূপীর শিল্প দক্ষতা ব্যহত হয়। তাই, টাকার দরকার থাকলেও হরিদা বিরাগীর বেশে থেকে জগদীশবাবুর কাছে টাকা নিতে পারেননি।
প্রশ্ন ১০। “খাঁটি মানুষ তো নয়”—কথাটির নিহিতার্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একসময় অনাদি ও ভবতোষের সঙ্গে কথাবার্তা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কথাটি বলেছেন। হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে একসময় বিরাগী সেজে গিয়েছিলেন এবং বিরাগীর মান বজায় রাখার জন্য একশো এক টাকা প্রণামীও গ্রহণ করতে পারেননি। হরিদা পরে জগদীশবাবুর কাছ থেকে কিছু বখশিশ নেওয়ার কথা
দুঃখকে প্রকাশ করে বলেন যে, তিনি তো বহুরূপী মাত্র, খাঁটি মানুষ নন।
■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও :
[ প্রশ্নের মান –৫]
প্রশ্ন ১। “খাটি মানুষ তো নয়,এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে” —‘এর’ বলতে বোঝানো হয়েছে? উক্তিটির মধ্যে বক্তার যে অন্তর্বেদনার পরিচয় পাওয়া যায়, তার বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে এসেছেন তার বখশিশ হিসেবে আট আনা কিংবা দশ আনার কথাই এখন আভাসিত হয়েছে। হরিদা আর্থিক দিক দিয়ে অসহায় ছিলেন। ব্যক্তিগত স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের জন্য কোনো অফিসের কাজ বা দোকানের বিক্রিওয়ালার কাজ করা তাঁর সম্ভব হয়নি। সপ্তাহে বড়োজোেড় একদিন বহুরূপী সেজে তার যে রোজগার হয়, তাতেও
তাঁর ঠিক ঠিক খাবার জোটে না। এই অবস্থায় তিনি বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। জগদীশবাবু প্রণামী হিসেবে একশো এক টাকা দিলেও তিনি শিল্পের ‘ঢং’ বজায় রাখার জন্য তা গ্রহণ করতে পারেননি। অনাদির সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি জগদীশবাবুর কাছে বখশিশ আদায় করবেন বলেছেন। তাতে ভবতোষ চিৎকার করে বলেন যে তা
বড়োজোর আট আনা কিংবা দশ আনা। আর তখনই হরিদা তাঁর ট্র্যাজিক জীবনের পরিচয় দিতে গিয়ে প্রশ্নের উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন যে—তিনি তো খাঁটি বিরাগী নন।
■ সুতরাং ঈশ্বরপ্রাপ্তির মতো শ্রেষ্ঠ কিছু পাওয়া
তাঁর আশার বাইরে। শুধু বহুরূপী সেজে বখশিশ পাওয়া ছাড়া তাঁর আর কিছু করার নেই। আর, শিল্পের জন্য তিনি বহুরূপী অবস্থায় টাকা নিতে পারেননি। মনের এই জটিল যন্ত্রণা-বেদনার কথাই প্রশ্নের উদ্ধৃতিটিতে আভাসিত হয়েছে।
প্রশ্ন ২। ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী বিরাগীর মুখ দিয়ে যে গভীর জীবনবাণী প্রকাশিত হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একসময় বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে এসেছেন এবং প্রসঙ্গক্রমে জীবন সম্বন্ধে গভীর তত্ত্বকথা উল্লেখ করেছেন। তা হল নিম্নরূপ-
বিরাগী একসময় সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়াকেই পরম সুখ বলে উল্লেখ করেছেন। জগদীশবাবু তাঁকে তাঁর বাড়িতে (জগদীশবাবুর বাড়িতে) থাকতে বললে তিনি বলেছেন যে, বাইরের খোলা আকাশ ও ধরিত্রীর মাটিই হল থাকার শ্রেষ্ঠ স্থান। বিরাগী জগদীশবাবুর কল্যাণ কামনাও করেছেন। কোনো কিছু দান গ্রহণ সম্বন্ধে বিরাগী
বলেছেন, তিনি তো ঈশ্বরের কাছে পড়ে আছেন। তাই, জগদীশবাবুর কাছে তাঁর চাওয়ার কিছু নেই। তিনি উপদেশ বাণীতে বলেছেন যে জীবনের ‘ধন-জন-যৌবন’ হল সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা। তাই মনের আকাঙ্ক্ষা দূর করে ঈশ্বরের আপন হওয়াই হল সব সম্পদ পেয়ে যাওয়া। তীর্থভ্রমণ সম্বন্ধে অভিমত হল, মানুষের বুকের ভিতরেই তথা হৃদয়েই তীর্থ বিরাজ করে।
■ সুতরাং বাইরের তীর্থের প্রয়োজন নেই। বিরাগীরা যে সোনাকে ধুলোর মতো মাড়িয়ে দিয়ে যেতে পারেন, সে কথাও তিনি বলতে চেয়েছেন। এইভাবে, বিরাগী পরম সুখ, এই তীর্থভ্রমণ, বিরাগীদের স্বভাব বৈশিষ্ট্য—ইত্যাদি সম্বন্ধে গভীর জীবনবাণী প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন ৩। ‘বহুরূপী’ গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রটি বর্ণনা করো।
উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের প্রধান চরিত্রটি হলেন বহুরূপী হরিদা। অফিস অথবা দোকানের কাজে একঘেয়েমি থাকায় হরিদা সে বিষয়ে আগ্রহী হননি। তিনি সপ্তাহে বড়ো- জোর একদিন বহুরূপী সেজে কিছু রোজগার করতেন তাতেই তিনি কোনো রকমে চালিয়ে দিতেন। তিনি পাগল, বাইজি, বাউল, কাপালিক, কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব ও পুলিশ সেজে রোজগার করেছিলেন। তারপর তিনি জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর কথা শুনে বিরাগীও সেজেছিলেন।
সেক্ষেত্রে জগদীশবাবু তাঁকে চিনতে না পেরে প্রণামী হিসেবে একশো এক টাকা দিলেও বিরাগীর ‘ঢং’ বজায় রাখার জন্য তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। পরে অবশ্য অর্থের জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন।
■ হরিদার মধ্যে ছিল এক অসাধারণ নিজস্ব জীবন দৃষ্টিভঙ্গি তথা স্বাতন্ত্র্যবোধ। সেই স্বাতন্ত্র্যবোধেই তিনি হাজার কষ্ট সত্ত্বেও বহুরূপীর জীবন বেছে নিয়েছিলেন। এক অদ্ভুত প্রসন্ন জীবন দৃষ্টিভঙ্গিতে চালিত হয়ে তাঁর বিরক্তিহীনতা লক্ষ করা গেছে। আর অসাধারণ অভিনয় যোগ্যতা ছিল বলেই বহুরূপী হিসেবে তিনি সফল। তিনি শিল্পের জন্য ব্যক্তিস্বার্থকেও বিসর্জন দিতে পেয়েছিলেন। তাঁর চরিত্রের মূল্যায়নে বলা যায়, “Art is hardly ever a business;
and business rarely becomes art.” [Camilo Josscela]
[…] আরও দেখো : বহুরূপী […]