পথের দাবী : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | মাধ্যমিক বাংলা সাজেশান

পথের দাবী সাজেশান | Pather Dabi Suggestion | মাধ্যমিক বাংলা

■ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও :[ প্রশ্নের মান – ১ ]
প্রশ্ন ১। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাটির উৎসগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর : ‘পথের দাবী’ উপন্যাস।
প্রশ্ন ২। ‘পথের দাবী’ উপন্যাসটি গ্রন্থের আকারে কখন প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৩। ‘সুমুখের হলঘরে’ কতজন বাঙালি মোটঘাট নিয়ে বসে আছে?
উত্তর : জনা ছ’য়েক।
প্রশ্ন ৪। “শুধু যে লোকটির প্রতি তাঁহার অত্যন্ত সন্দেহ হইয়াছে”—সন্ধিগ্ধ লোকটিকে কোথায় রাখা হয়েছে?
উত্তর : একটি ঘরে আটক রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ৫। পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখা মানুষেরা কোথায় কীসের কাজ করছিল?
উত্তর : তারা সকলেই উত্তর ব্রহ্মের বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় মিস্ত্রির কাজ করছিল।
প্রশ্ন ৬। তেলের খনির কর্মীরা তেলের খনি ছেড়ে রেঙ্গুনে এসেছিল কেন?
উত্তর : উত্তর ব্রহ্মের জল হাওয়া সহ্য হয়নি বলে।
প্রশ্ন ৭। সব্যসাচী মল্লিকের বয়স কত?
উত্তর: তিরিশ-বত্রিশের অধিক নয়।
প্রশ্ন ৮। “কেবল আশ্চর্য’’—কোন্ আশ্চর্যের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : সব্যসাচী মল্লিকের রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি।
প্রশ্ন ৯। “মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করিতে সাহস করে না”—মৃত্যু কোথায় প্রবেশ করতে সাহস করে না?
উত্তর : সব্যসাচী মল্লিকের চোখের দৃষ্টিতে মৃত্যু প্রবেশ করতে সাহস করে না।
প্রশ্ন ১০। “কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকে নাই বলিলেই চলে”—কী না থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : সব্যসাচী মল্লিকের মাথার চুল না থাকার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১১। সব্যসাচীর মাথার কোন তেলের গন্ধে থানার ঘর ভরে উঠেছিল?
উত্তর : নেবুর তেলের গন্ধে।
প্রশ্ন ১২। “তোমার নাম কী হে”—উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী নাম বলেছিল?
উত্তর : গিরীশ মহাপাত্র।
প্রশ্ন ১৩। “দেখি তোমার ট্যাকে ও পকেটে কী আছে?”—সব্যসাচী মল্লিকের ট্যাক থেকে কী বেরিয়েছিল?
উত্তর : একটি টাকা ও গণ্ডা ছয়েক পয়সা।

প্রশ্ন ১৪। সব্যসাচী মল্লিকের পকেট থেকে কী বেরিয়েছিল?
উত্তর: একটি লোহার কম্পাস, একটি ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটি দেশলাই ও গাঁজার একটি কলকে বেরিয়েছিল।
প্রশ্ন ১৫। সব্যসাচীকে ছেড়ে দেওয়ার পর নিমাইবাবু কীসের প্রতি দৃষ্টি রাখতে বলেছিলেন?
উত্তর : রাত্রের মেল ট্রেনটার প্রতি।
প্রশ্ন ১৬। “কিন্তু ঠিক কী যে সে ভাবিতে লাগিল তাহার নির্দেশ নাই”—অপূর্ব কী নিয়ে ভাবছিল?
উত্তর : পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের ক্রিয়াকলাপ পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে সে ভাবছিল।
প্রশ্ন ১৭। “রামদাস আর কোনো প্রশ্ন করিল না”—রামদাস কে?
উত্তর : ব্রহ্মদেশের বোথা কোম্পানির এক অফিসের কর্মী হলেন রামদাস।
প্রশ্ন ১৮। “অপূর্ব রাজি হইয়াছিল”—অপূর্ব কীসে রাজি হয়েছিল?
উত্তর : অপূর্ব, রামদাসের স্ত্রীর দেওয়া মিষ্টান্ন প্রত্যেকদিন খেতে রাজি হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৯। “মেয়েটির কৃপায় টাকাকড়ি ছাড়া আর সমস্ত বাঁচিয়াছে”—কোন্ মেয়েটির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : অপূর্ব রেঙ্গুনে যে বাড়িতে থাকেন, তার ওপর তলার ‘ক্রিশ্চান’ মেয়েটির কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ২০। “সে চোর তাড়াইয়া দরজায় নিজের তালা বন্ধ করিয়াছে”—কে চোর তাড়িয়েছে?
উত্তর : এক বিশেষ ‘ক্রিশ্চান’ মেয়ে।
প্রশ্ন ২১। রামদাস অফিসে কীসের কাজ করতেন?
উত্তর : অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন।
প্রশ্ন ২২। তেওয়ারি বর্মা নাচ দেখতে কোথায় গিয়েছিল?
উত্তর : খরায়।
প্রশ্ন ২৩। “কথাটা বলিয়া ফেলিয়া সেই একটু অপ্রতিভ হইয়া চুপ করিল”—কোন্ কথা আভাসিত হয়েছে?
উত্তর : রামদাসের সংশ্লিষ্ট কথাটি হল—“তাহলে আপনাকেই হয়তো আর একদিন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে”।
প্রশ্ন ২৪। অপূর্ব রেঙ্গুনের অফিস থেকে কোন্ অফিসে যাত্রা করেছিল?
উত্তর : ভামোর অফিসে।
প্রশ্ন ২৫। পাঠ্য রচনায় ভামোর অফিস ছাড়া আর কোন্ কোন্ অফিসের উল্লেখ আছে?
উত্তর : ম্যানডেল, শোএব, মিক্‌থিলা ও প্রোম।
প্রশ্ন ২৬। ভামো যাওয়ার সময় অপূর্বর সঙ্গে কে ছিল?
উত্তর : একজন আরদালি ও অফিসের একজন হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ ‘পিয়াদা’।
প্রশ্ন ২৭। ‘গাড়ি ছাড়িতে বোধ করি… বিলম্ব ছিল”—কত বিলম্ব ছিল?
উত্তর : মিনিট পাঁচেক।
প্রশ্ন ২৮। “এই সব্যসাচীটির পিছনেই কাকাবাবু সদলবলে এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে”—কাকাবাবুটি কে?
উত্তর : পুলিশ কর্মচারী নিমাইবাবু।
প্রশ্ন ২৯। ভামো যাওয়ার সময় অপূর্ব ট্রেনে কোন্ শ্রেণির যাত্রী ছিলেন?
উত্তর : প্রথম শ্রেণির।
প্রশ্ন ৩০। “বর্মা সব ইনস্পেক্টর সাহেব কটু কণ্ঠে জবাব দেয়…” কী জবাব দেয়?
উত্তর : “তুমি তো ইউরোপিয়ান নও”।

—————————————————

আরও দেখো : বহুরূপী

————————————

■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও :
[ প্রশ্নের মান 3]

প্রশ্ন ১। ‘তাছাড়া আমার বড় লজ্জা এই যে…”—কোন বিষয়টিকে বড়ো লজ্জা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব একজন প্রাক্তন বিপ্লবী। সে একসময় স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে পরে বৈপ্লবিক আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও বিপ্লবীদের প্রতি মনের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহানুভূতি পোষণ করত। সেই কারণে, সে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে আসা পুলিশ কর্মচারী নিমাইবাবুকে ভালো চোখে দেখেনি। সে বলেছে যে, নিমাইবাবু তার আত্মীয় ও পিতার বন্ধু—এটাই বড় লজ্জার কথা।

প্রশ্ন ২। “অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বা না রামদাস”—এখানে কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব কোনো প্ল্যাটফর্মে ঘটা অপমান- জনক বিষয় উল্লেখ করেছে। সেই ঘটনায় দেখা যায়—বিনা দোষে দেশি ফিরিঙ্গি ছোড়ারা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছে। অপূর্ব সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে গেছে। সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্বকে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছে। অপূর্ব বিলেতের লোক হলে ভালো ব্যবহার পেত, ভারতীয় বলে খারাপ ব্যবহার পেয়েছে—এটাই তার মনকে কম কষ্ট দেয়নি।

প্রশ্ন ৩ । “কিন্তু ইহা যে কত বড় ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরে সে অনুভব করিল”—কীভাবে অপূর্বর মনে এই ধারণা এসেছে?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব ভামো যাত্রার জন্য প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে ট্রেনের কামরায় উঠেছে এবং ভোজনাদি শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে সুস্থ চিত্তে শয্যা গ্রহণ করে শান্তিতে ঘুমোনোর কথা ভেবেছে। কিছুক্ষণ পরেই তার সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশের লোক বার তিনেক এসে তার ঘুমের বিঘ্ন ঘটিয়ে নাম- ঠিকানা লিখে নিয়ে গেছে। অপূর্ব প্রতিবাদ করলে বর্মার সাব-ইনস্পেক্টর কটু কণ্ঠে বলেছে, “তুমি তো ইউরোপিয়ান নও”। প্রসঙ্গক্রমে সে আরও বলেছে, “ইচ্ছা করিলে আমি তোমাকে টানিয়া নীচে নামাইতে পারি”। এইভাবে, অপূর্ব সংশ্লিষ্ট ধারণা পেয়েছে।

■ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর দাও : (শব্দ সংখ্যা ১৫০) [ প্রশ্নের মান – ৫]

প্রশ্ন ১। “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে”—বাবুটির স্বাস্থ্যের পরিচয় দাও। তার শখ কীরূপ ছিল ?

উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় সংশ্লিষ্ট বাবুটি হলেন পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক। তিনি বেশ কাশিতে আক্রান্ত। তাঁর অত্যন্ত ফরসা রং রোদে পুড়ে যেন তামাটে হয়েছে। তাঁর বয়স তিরিশ- বত্রিশের অধিক নয়, কিন্তু ভারী রোগাটে। কাশির পরিশ্রমে তিনি এমন হাঁপাতে থাকেন যে, আশঙ্কা হয়, বেশিদিন বাঁচবেন না। তবে, তাঁর দৃষ্টি বেশ আকর্ষণীয়। সেখানে গভীর অভিজ্ঞতা কাজ করে বলে কোনো ছল-চাতুরি চলে না। সব্যসাচী মল্লিক গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে হাজির হয়েছেন। তাঁর ছদ্মবেশের বর্ণনায় দেখা যায় যে, তাঁর মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, ঘাড় ও কানের দিকে তা নেই বললেই চলে—এমন ছোটো করে ছাঁটা। তাঁর মাথায় চেরা সিঁথি দেখা যায়। তা অপর্যাপ্ত ‘নেবুর তেলে সিক্ত’। তাঁর গায়ে জাপানি সিলেকর রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, তাঁর বুকপকেট থেকে বাঘ আঁকা একটা রুমালের কিছুটা দেখা যাচ্ছে, উত্তরীয়ের কোনো বালাই নেই। পরনে বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা ওপরে লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা, এবং পায়ে বার্নিশ করা পাম্প শু। সেই জুতো আগাগোড়া লোহার নাল দিয়ে বাঁধানো। তাঁর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি। জাহাজের ধকলে সবকিছুই নোংরা হয়ে উঠেছে। এটাই হল বাবুটির শখের পরিচয়।

প্রশ্ন ২। “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে”—একথা বলার কারণ কী?
অথবা,
“ধীর মন্থর পদে উত্তর দিকের রাস্তা ধরিয়া সোজা প্রস্থান করিলেন”—উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের রাস্তা করে বেরিয়ে গেলেন?
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক নিজেকে তেলের খনির শ্রমিক হিসেবে নিখুঁত ভাবে উপস্থাপিত করেছেন। আর সেইভাবেই তিনি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে থানা থেকে সহজেই বেরিয়ে গেছেন। তিনি অত্যন্ত রোগা চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁর মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু
ঘাড় ও কানের দিকে তা ছিল না বললেই চলে। সেই চুলেই তিনি প্রচুর পরিমাণে নেবুর তেল নিয়ে লাগিয়ে ছিলেন। জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার- পাঞ্জাবি বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সুক্ষ্ম শাড়ি, সবুজ রঙের ফুল মোজা ইত্যাদি ব্যবহার করে তিনি নিজের অদ্ভুত শখের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। নিজের ট্যাকে টাকা-পয়সা, বিড়ি, দেশলাই, কম্পাস ইত্যাদি রেখে নিজের খেয়ালি কল্পনাকেও তিনি স্পষ্ট করে তুলেছিলেন। কাছে গাঁজা তৈরির কলকে রেখেও তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুখে বলেছিলেন, “আজ্ঞে না, মাইরি খাইনে।” এতে তাঁর মিথ্যাবাদিতার পরিচয় দারুণ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব কিছু মিলেমিশে তাঁর এক নিজস্ব দিক ফুটে উঠেছিল। সেইসব দেখেশুনে অপূর্ব, জগদীশবাবু ও নিমাইবাবুর মনে হয়েছিল যে, ব্যক্তিটি যিনিই হোন না কেন, পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক নন। অপূর্বর ধারণা সম্বন্ধে অবশ্য ভিন্ন কথাও বলা যায় । যেভাবেই হোক না কেন, সব্যসাচী মল্লিক তাঁর চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদ কথাবার্তা ও আচার-আচরণে নিজেকে তৈলখনির শিক্ষাদীক্ষাহীন নিম্নরুচির মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে সফল হয়েছিলেন। ফলে তিনি থানায় পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সহজেই যেতে পেরেছিলেন।

প্রশ্ন ৩। “পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।”—এরপর পুলিশ- স্টেশনে কী পরিস্থিতি তৈরি হল, তা পাঠ্যাংশ অনুসারে আলোচনা করো।
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে কেন্দ্র করে পুলিশ-স্টেশনে পুলিশ কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। সব্যসাচী মল্লিক আধুনিক শিক্ষা- দীক্ষাহীন, খেয়ালি রুচির শ্রমিক হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। তিনি ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও বিশেষ ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহারে বেশ উৎসাহী ছিলেন। অপূর্ব সব্যসাচী মল্লিকের চোখের অদ্ভুত দৃষ্টির দিকে তাকিয়েছিলেন। আর পুলিশ কর্মচারী নিমাইবাবু হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে”। নিমাইবাবুর কথায় অপূর্ব তার অদ্ভুত ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে তাকে সব্যসাচী মল্লিক বলে মানতে রাজি হননি; তাকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। নিমাইবাবু অবশ্য তার নাম, ঠিকানা, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করেছেন।

পকেটে গাঁজা তৈরির কলকে থাকায় নিমাইবাবু তাকে গাঁজাখোর হিসেবে ধরে নেন এবং ‘আর খেয়ো না’ বলে উপদেশ দেন। সব্যসাচী মল্লিক “আজ্ঞে না মাইরি খাইনে” –বলতে জগদীশ- বাবু রেগে গিয়ে তাকে মিথ্যাবদী বলে চিহ্নিত করেন। নিমাইবাবু তাকে অদ্ভুত রুচির, তৈলখনির তুচ্ছ শ্রমিক হিসেবে ধরে নিয়ে ছেড়ে দিতে চান; জগদীশবাবুও তাতে সম্মতি জানান। শেষ পর্যন্ত নিখুঁত ছদ্মবেশ পরিকল্পিত কথাবার্তা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে সব্যসাচী মল্লিক পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যান।

প্রশ্ন ৪ : “কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না রামদাস”—এখানে কীরূপ অবিচারের কথা উল্লিখিত হয়েছে? উক্তিটির আলোকে বক্তার চরিত্রের কোন পাওয়া যায়?
৩+২
উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব, রামদাস তলোয়ারকরের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে ইংরেজ শাসনের ঘৃণ্য দিক তুলে ধরেছেন। কিছু ‘ফিরিঙ্গি ছোঁড়া প্ল্যাটফর্মে বিনা দোষে অপূর্বকে একসময় লাথি মেরে বার করে দিয়েছে। অপূর্ব সাহেব স্টেশন মাস্টারের কাছে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। সাহেব স্টেশন- মাস্টার তাঁকে ‘দেশি লোক’ বলে জানার পর ভালো ব্যবহার করেননি। অন্যায়ের বিচার তো দূরের কথা, অপূর্বকেই তিনি স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছিলেন। বিষয়টি অপূর্বর মনকে খুবই ব্যথিত করেছিল। তিনি রামদাসের সঙ্গে কথা। প্রসঙ্গে সেই অবিচারের কথাই উল্লেখ করেছেন।

উক্তিটির আলোকে একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিককে প্রতিবাদী চেতনাপূর্ণ সূক্ষ্ম হৃদয় বৃত্তির দিকটিকে উল্লেখ করা যায়। অপূর্ব হলেন সেই ধরনের প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তি। তিনি ফিরিঙ্গি ছোড়াদের অন্যায় আচরণকে মেনে নিতে পারেননি তাই তিনি প্রতিবাদের মনোভাব নিয়ে স্টেশন মাস্টার-এর কাছে অভিযোগ তুলেছিলেন। স্টেশন মাস্টারের
কাছে তার প্রতিবিধান না পাওয়ায় তিনি মানসিকভাবে খুব আঘাত পেয়েছেন। একটা অব্যক্ত প্রতিশোধী চেতনা ও যেন তাঁর মধ্যে উঁকি দিয়েছে।

প্রশ্ন ৬। “যাঁকে তিনি দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন, তিনি ঢের বেশি আমার আপনার” —কার উদ্দেশ্যে কথাটি বলা হয়েছে? বক্তা তাঁকে কেন ‘ঢের বেশি আমার আপনার’ বলে চিহ্নিত করেছেন?

উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় প্রাসঙ্গিকভাবে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের কথা বলা হয়েছে।

সব্যসাচী মল্লিক দেশ ও দশের কল্যাণকর্মে উৎসর্গীকৃত প্রাণ । বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী হয়েও তিনি ব্যক্তিস্বার্থে নিজের জীবনকে চালাননি। পরিবর্তে তিনি ইংরেজদের শাসন, শোষণ, পীড়নের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্যই নিজের বুদ্ধি, উদ্যম ও কর্মকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন। সুতরাং, সব্যসাচীর মধ্যে ছিল ভারত-উদ্ধারের বৃহত্তর ও উদার পরিকল্পনা। অপূর্ব প্রাক্তন বিপ্লবী। সব্যসাচী মল্লিকের মহৎ উদ্দেশ্য ও শ্রেষ্ঠ কর্মকে বুঝে নেওয়ার মতো বড়ো হৃদয় তাঁর ছিল। তাঁর মনে হয়েছিল যে, নিমাইবাবু তাঁর আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী হন না কেন, নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী মল্লিকই শ্রেষ্ঠ। নিমাইবাবুর আচরণে ইংরেজ-আনুগত্য ও স্বার্থ ছিল। আর, সব্যসাচীর কর্মধারাই যে অধিক প্রশংসনীয় ও গ্রহণীয়—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর, সেই কারণেই অপূর্ব নিমাইবাবুর চেয়ে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে বেশি আপনার বলে চিহ্নিত করেছেন।

প্রশ্ন ৭। ‘পথের দাবী’ রচনা অবলম্বনে গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনার প্রধান চরিত্রটি হলেন পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক তথা গিরীশ মহাপাত্র। তিনি বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী হয়েও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য কিছুই করেননি। তিনি ইংরেজদের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা আনার জন্য নানান বৈপ্লবিক কার্যকলাপে যুক্ত থেকেছেন।
সেই সূত্র ধরেই তিনি বাংলাদেশ থেকে জাহাজের যাত্রী হিসেবে রেঙ্গুনে এসেছেন। ইংরেজ সরকারের কাছে সেই খবর থাকায় নিমাইবাবুর নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল এসেছে তাঁকে ধরার জন্য। পুলিশ স্টেশনে সব্যসাচী মল্লিককে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে আনাও হয়েছে। তিনি তাঁর অদ্ভুত দর্শন পোশাক- পরিচ্ছদ, কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মাধ্যমে নিজেকে তৈলখনির তুচ্ছ শ্রমিক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন তাতে নিমাইবাবু সহ সকলেই বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁকে ছেড়েও দিয়েছেন। তিনিও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে নিজের কাজের পথে চলে গেছেন। সব্যসাচীর এই আচরণে তাঁর দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা ও মেধা, কর্মনিষ্ঠা ও বুদ্ধির চাতুর্য ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশ ও দশের কল্যাণকর্মে উৎসর্গীকৃত প্রাণ। সেইসঙ্গে ছিল তাঁর অসাধারণ জীবন- অভিজ্ঞতা, চোখের দৃষ্টি ও কর্মে একাগ্রতা। নিখুঁত ছদ্মবেশ ধারণ করে নিমাইবাবুর মতো জাঁদরেল বাঙালি পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে তিনি চলে যেতে পেরেছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে তাঁকে পরাধীন ভারতবর্ষের বহু প্রতীক্ষিত সুকৌশলী আদর্শ বিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

প্রশ্ন ৮। ‘পথের দাবী’ রচনা অবলম্বনে অপূর্বর চরিত্র বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনার অন্যতম প্রধান চরিত্র হল অপূর্ব। সে এক কোম্পানির অধীনে চাকরি নিয়ে রেঙ্গুনে গেছে। ঘটনা পরম্পরায় পূর্বপরিচিত নিমাই বাবুর সঙ্গে সেখানে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। সেই নিমাইবাবুর সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গেছে এবং পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে সবারই অজ্ঞাতসারে চিনেও ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত সে সব্যসাচী মল্লিককে নিজের কাজে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরোক্ষ- ভাবে সাহায্যও করেছে। ঘটনা পরম্পরায় সে নিমাইবাবুর পরিবর্তে সব্যসাচীর প্রতি নিজের আন্তরিকতা প্রকাশ করেছে। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সে অসন্তুষ্টই থেকেছে। অপূর্বর এইরূপ ঘটনা পরম্পরা থেকে চরিত্রের কয়েকটি দিক সহজেই চোখে পড়ে—

প্রথমত, অপূর্ব ছিল একজন সংস্কারাচ্ছন্ন ব্রাহ্মণ। তার জীবন-আচরণ ও খাওয়ার ব্যাপারে সেই দিকটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত, অপূর্বর মধ্যে গভীর দেশপ্রেম ছিল, তাই সে সব্যসাচী মল্লিকের কাজের মূল্যায়ন করে তাকেই সমর্থন করেছে।

তৃতীয়ত, প্ল্যাটফর্মে ফিরিঙ্গি ছোড়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ট্রেনে ‘সব-ইন্সপেক্টর সাহেব’-এর সঙ্গে কথাবার্তায় তার দেশপ্রেম মিশ্রিত প্রতিবাদী চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

চতুর্থত, অফিসের বড়োসাহেব তার ওপর
যেভাবে নির্ভর করেছেন, তাতে তার কর্মনিষ্ঠার দিকটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

পঞ্চমত, বাসায় চুরি হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে থানা-পুলিশ করতে যাওয়া অথবা রামদাসের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা-নির্ভর জীবন-বৈশিষ্ট্যের পরিচয় ফুটে উঠেছে।
এইভাবে, পাঠ্য রচনায় ‘অপূর্ব’ চরিত্রটি তার দেশপ্রেম, প্রতিবাদী চেতনা, কর্মনিষ্ঠা ইত্যাদির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

প্রশ্ন ৯। “তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না রামদাস”—বক্তা কে? পাঠ্যাংশ অবলম্বনে তার স্বদেশ প্রেমের পরিচয় দাও।

উত্তর :

প্রশ্নোদ্ধৃত তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটির বক্তা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্ব। অপূর্ব কোনো বিপ্লবী চরিত্র নয়। চাকরি সূত্রে তার রেঙ্গুনে যাওয়া এবং সেখানে নিমাই বাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার সুবাদে গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী পরাধীন দেশের মুক্তিদূত সব্যসাচী মল্লিকের দর্শনলাভ। উক্ত ঘটনার সূত্রে একদা স্বদেশী করা অপূর্বর স্বদেশপ্রেমের ফল্গুধারা উন্মোচিত হয়ে পড়ে।

গিরীশ মহা- পাত্রের চোখের অদ্ভুত দৃষ্টি দেখেই অপূর্ব অভ্রান্তভাবে বুঝতে পারে, সেই মানুষটিই বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। কিন্তু অপূর্বই (গিরীশ মহাপাত্রের) সব্যসাচী মল্লিকের কালচারের কথা তুলে গিরীশ মহাপাত্রের মুক্তির ব্যবস্থা করে। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গিরীশ মহাপাত্রের অন্তর্ধান অপূর্বকে খুশি তো করেই, উপরন্তু তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায় অবনতও করে। রামদাস তলোয়ারকরের সঙ্গে পরাধীনতার গ্লানি এবং স্টেশনে ফিরিঙ্গি ছোঁড়াদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার (ঘটনা) কথা প্রসঙ্গে অপূর্বর স্বদেশ প্রেমের আবেগ উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে। বিদেশীদের হাতে লাঞ্ছনা তার কালো চামড়ার নীচে কম জ্বালা দেয় না, তাই তার উদাত্ত ঘোষণা—“আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই সব সহস্র কোটি অত্যাচার উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।” অপূর্বর স্বদেশ ভাবনায় ও সব্যসাচী মল্লিকের প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধায় তার স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

Rlearn Education