বাংলা প্রতিবেদন রচনা | Bangla Protibedon Rochona

প্রতিবেদন রচনা :মাধ্যমিক বাংলা

সহজ অথচ আকর্ষণীয় ভাষায় পরিবেশিত খবর হল প্রতিবেদন। এর ইংরেজি নাম Reporting (রিপাের্টিং)। অবশ্য ব্যাপক অর্থে সংবাদ ছাড়াও সাক্ষাধর্মী লেখা, ফিচার, সম্পাদকীয় রচনা সবই প্রতিবেদন। প্রতিবেদন রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,তাই প্রতিবেদককে বিশেষ দায়িত্ব ও সচেতনতার সঙ্গে প্রতিবেদন রচনা করতে হয়। সংবাদদাতা কোনাে ঘটনাকে চাক্ষুষ দেখে প্রতিবেদন রচনা করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তার সামনে একটা বাস্তব পরিস্থিতি পরিদৃশ্যমান হয়। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাত্রছাত্রীদের যে প্রতিবেদন রচনা করতে দেওয়া হয়, তা একটা কাল্পনিক বিষয়। ছাত্রছাত্রীদের মনে মনে সেই বিষয়টির একটা বাস্তব রূপ দান করতে হবে।‘প্রতিবেদন’শব্দের অর্থ হল বিবরণী বা রিপাের্ট। সাধারণত সংবাদপত্রে খবররূপে প্রকাশের উদ্দেশ্যে কোনাে বিষয়কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় বা তুলে ধরা হয়, তাকেই প্রতিবেদন বলা হয়ে থাকে। যিনি এই প্রতিবেদন রচনা করেন, তাকে বলা হয় প্রতিবেদক।সংবাদপত্রে প্রকাশের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্যান্য কারণেও প্রতিবেদন রচিত হতে পারে। যেমন, কোনাে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের বিভিন্ন কাজের বিবরণ দিয়েও প্রতিবেদন রচিত হয়ে থাকে। সেগুলি ওই প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সদস্যদের সামনে কোনাে সভায় পাঠ করা হয় কিংবা তাদের মুখপত্রে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন নানারকমের হতে পারে। যেমন—রাজনৈতিক, পরিবেশমূলক, খেলাধূলা বিষয়ক, অপরাধ বিষয়ক, অনুসন্ধানমূলক, শিল্পসংস্কৃতি বিষয়ক প্রভৃতি।

–––——————————————

প্রতিবেদন রচনার নিয়ম:

• প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজসরল।

• প্রতিবেদন হবে কোনাে বিষয় বা ঘটনার যথাযথ বিবরণ রচনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কল্পনাকে প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।

• নিজস্ব মতামত প্রকাশ বা সমালােচনা করা যাবেনা।

• তথ্যবিকৃতি না ঘটিয়ে প্রতিবেদনটিকে আকর্ষণীয় ও সুখপাঠ্য করে তুলতে হবে।

• বিশেষ কোনাে রাজনৈতিক দল বা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত বা বিরূপতা যেন প্রতিবেদনে প্রকাশ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

• প্রতিবেদনে অবশ্যই একটি শিরােনাম যােগ করতে হবে।

শিরােনামের মধ্যে দিয়ে প্রতিবেদনের বক্তব্য সম্পর্কে পাঠক যেন আগ্রহী হয়ে ওঠেন, সেকথা মাথায় রাখতে হবে।

• প্রতিবেদনটি আয়তনে যদি বড়াে হয় তাহলে রচনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রয়ােজনীয় অনুচ্ছেদ-বিভাজন করে নিতে হবে।

• লক্ষ রাখতে হবে প্রতিবেদনে একই কথা যেন বারবার বলা না হয়।

• যে-কোনাে প্রতিবেদনে ভাববাচ্যের প্রাধান্য থাকাই বাঞ্ছনীয়।

• প্রতিবেদন যেন বিভ্রান্তিকর ও সামাজিকভাবে ক্ষতিকর না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

• বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রতিবেদনের একটি শিরােনাম দিতে হবে।

• পরীক্ষার উত্তরপত্রে প্রতিবেদন রচনা পর্ষদনির্দেশিত শব্দসীমার (কমবেশি ১৫০ শব্দ) মধ্যে রাখা আবশ্যিক।

নিম্নে কয়েকটি প্রতিবেদন রচনার উদাহরণ দেওয়া হলো :

প্রতিবেদন নং-১
সমাজ থেকে পােলিয়াে নির্মূল করতে প্রচার অভিযান সম্পর্কে প্রতিবেদন:

মানিকচক(মালদা), ২৬ নভেম্বর : আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর সারা দেশব্যাপী পােলিয়াে টিকাকরণ কর্মসূচি পালিত হবে। এই উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন মানিকচক ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, ছাত্রছাত্রী- শিক্ষক, এলাকার সচেতন মানুষেরা। এমনকি স্থানীয় ক্লাবগুলিও যােগ দিয়েছে এই প্রচার অভিযানে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওঁরা বােঝাচ্ছেন পাঁচ বছর বয়সের নীচে একটি শিশুও যেন পােলিয়াের টিকা থেকে বঞ্চিত না হয়। পােলিয়াের ভাইরাস সংক্রমণ হলে একটি শিশু পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। এই কথা তারা সকলে মিলে বােঝাচ্ছেন এলাকার প্রতিটি বাড়ির সদস্যকে অবশ্য প্রথম দু-দফার পােলিয়াে টিকাকরণের হার আশানুরূপ হয়নি। এজন্য এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু মূল সমস্যা যে অশিক্ষা ও দারিদ্র এবং তার ফলে হতদরিদ্র মানুষগুলির সচেতনতার অভাব, তা সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন।মানিকচকে পােলিয়াে টিকাকরণ অভিযানে সর্বস্তরের মানুষের এই উদ্যোগ—এই রাজ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।


প্রতিবেদন নং-২ প্রধান শিক্ষকের অবসর কালে সংবর্ধনা সভা :

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকচক(মালদা), ১৩ জানুয়ারি :মানিকচক শিক্ষানিকেতন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী জ্যোতিভূষণ পাঠক মহাশয়ের অবসরগ্রহণের প্রাক্কালে একটি সংবর্ধনা সভার আয়ােজন করা হয়।গত১১জানুয়ারি,স্থানীয় কমিউনিটি হলে এই সভার আয়ােজন করেন শ্রী পাঠকের প্রাক্তন ছাত্র ও অভিভাবকবৃন্দ। শ্রী জ্যোতিভূষণ মহাশয় দীর্ঘ কুড়ি বছর এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এই বিদ্যালয়ের উন্নয়নের সঙ্গে তার শ্রম ও নিষ্ঠা জড়িয়ে আছে।মহকুমার শাসক তথা স্কুলের কার্যনিবাহী সমিতির সভাপতি এবং এলাকার বহু বিশিষ্ট মানুষ এই সংবর্ধনা সভায় হাজির ছিলেন। এঁদের অধিকাংশই শ্রী জ্যোতিভূষণ এর প্রাক্তন ছাত্র। স্কুলের সম্পাদক শ্রীঅবনী ভট্টাচার্য , ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং বহু অনুরাগী অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্র শ্রী জ্যোতিভূষণ পাঠক মহাশয়ের নীরােগ দীর্ঘজীবন কামনা করেন। প্রাক্তন ছাত্র, স্কুলের শিক্ষক ও বর্তমান ছাত্রদের তরফ থেকে শ্রী জ্যোতিভূষণ মহাশয়কে একটি মানপত্র ও স্মারক শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

———————————————————

আরও দেখো : বসুবিজ্ঞান মন্দির ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অবদান

———————————————————

প্রতিবেদন নং-৩

আর্সেনিকদূষণের কবলে কলকাতা সম্পর্কে প্রতিবেদন :

নিজস্ব প্রতিবেদন, কসবা, ৮ জুন: কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আর্সেনিকদূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্বিচারে ভূগর্ভ থেকে প্রতিনিয়ত জল তােলাই এর প্রধান কারণ। আর্সেনিকদূষণের কারণে কসবা বােসপুকুর অঞ্চলের এক বাসিন্দার মৃত্যুই বিষয়টিকে সামনে এনেছে। মৃত সুতীর্থ হালদার এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ছিলেন। জলাভাবের কারণে তিনি এবং তার প্রতিবেশীরা ৮০ থেকে ১২০ফুট গভীরতার পাঁচটি নলকূপ বসান। প্রতিবেশীদের ক্ষোভ, বহুদিন ধরেই কসবা, লেকগার্ডেন্স, গড়িয়া, বেহালা এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলের অভাব এবং নিম্নমান নিয়ে অভিযােগ জানিয়েও কোনাে প্রতিকার হয়নি। এলাকার শিশু থেকে বয়স্কদের অনেকেই আর্সেনিকঘটিত নানা ধরনের চর্মরােগের শিকার হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের রােগীদের চিকিৎসাও মেলা ভার। সবচেয়ে বড়াে কথা, নিদারুণ জলসংকট জনসাধারণকে আর্সেনিকদূষিত জল ব্যবহারে বাধ্য করছে। ফলে বেড়েছে মারণরােগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও। আশার কথা,স্থানীয় পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দূষণমুক্ত জল ব্যবহারের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে স্থানীয় ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন- গুলিও উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। জলের অপচয় রােধে, পানীয় জলের বিশুদ্ধতা রক্ষায়, আর্সেনিকদূষণের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে নানা জায়গায় সচেতনতা শিবিরেরও আয়ােজন করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন নং-৪ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনী সভার আয়োজন

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকচক , ৩ জানুয়ারি: মালদা জেলার এনায়েতপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এনায়েতপুর ই. এ উচ্চবিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ ব্যাপী একটি বিজ্ঞান প্রদর্শনী চলছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা,শিক্ষাকর্মী, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের সম্মিলিত উদ্যোগে এই বিজ্ঞান প্রদর্শনীটি প্রতিবছরই যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে আয়ােজিত হয়ে থাকে। এ বছর বিদ্যালয়ের নবনির্মিত বিজ্ঞানব্লকের তিনটি ঘরে এই প্রদর্শনীর আয়ােজন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের উপর নিজেদের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মডেল প্রদর্শনীতে রেখেছেন। প্রদর্শনীটির সময় বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এই প্রদর্শনীটিকে ঘিরে প্রতি বছরের মতাে এ বছরেও এলাকায় বেশ সাড়া পড়ে গেছে। ১ জানুয়ারি মাননীয় জেলাশাসক এর উদবােধন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ ধরনের প্রদর্শনী পাঠ্যবিষয়কে আরও ভালােভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারেও এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন মহাশয় এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছাত্রছাত্রীদেরই দিতে চেয়েছেন। আশেপাশের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সমবেতভাবে উপস্থিত হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে প্রদর্শনীটি দেখছে এবং চিন্তাভাবনার আদানপ্রদান করছে। আগামী বছর প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ উয্যাপিত হবে। সেই উপলক্ষ্যে প্রদর্শনীটি আরও আকর্ষণীয় করে তােলার কথা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

প্রতিবেদন নং- ৫ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ক্লাবে রক্তদান কর্মসূচী

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকচক (মালদা), ১৬ আগস্ট :গতকাল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে এনায়েতপুর ইয়ং স্টার ক্লাবে একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়ােজন করা হয়।ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডােনার্স অ্যাসােসিয়েশনের সহযােগিতায় ৮৭ জন রক্তদাতা এই শিবিরে রক্তদানকরেন। এই উপলক্ষ্যে মালদার জেলাশাসক উপস্থিত হয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। স্বাধীনতা দিবসে ক্লাবের গঠনমূলক উদ্যোগে শামিল হয়েছিলেন স্থানীয় জনসাধারণ। জেলাশাসক রক্তদাতাদের হাতে একটি করে স্মারক উপহার তুলে দেন।

Comments 2

Rlearn Education